বকেয়া বেতন-ভাতা না পেয়ে কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাবেক ১৩ সাংবাদিক আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। রোববার (১৭ আগস্ট) কালের কণ্ঠের স্বত্বাধিকারী ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও কালের কণ্ঠের প্রকাশকসহ ছয়জনের কাছে তারা এই নোটিস পাঠান।
নোটিসদাতারা হলেন মো. শাহ আলম, মো. জাহেদুল আলম, কাকলি প্রধান, দেওয়ান আতিকুর রহমান, ফারজানা রশিদ, আবু সালেহ মো. শফিক, কে এম লতিফুল হক, আসাদুর রহমান, মো. রোকনুজ্জামান, শামসুন নাহার, মো. লতিফুল বাসার (লিমন বাসার), মাহাবুর রহমান মীর ও হানজালা হান।
এর মধ্যে মো. শাহ আলম ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯০ টাকা, মো. জাহেদুল আলম ৪ লাখ ৮ হাজার ২৯১ টাকা, কাকলি প্রধান ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮০ টাকা, দেওয়ান আতিকুর রহমান ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬ টাকা, ফারজানা রশিদ ৫ লাখ ১৫ হাজার ২২৮ টাকা, আবু সালেহ মো. শফিক ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩১১ টাকা, কে এম লতিফুল হক ৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৪ টাকা, আসাদুর রহমান ৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৪ টাকা, মো. রোকনুজ্জামান ১ লাখ ৫ হাজার ৯৭৬ টাকা, শামসুন নাহার ৫ লাখ ৭২ হাজার ১২৮ টাকা, মো. লতিফুল বাসার (লিমন বাসার) ৫৬ হাজার ৩৬ টাকা, মাহাবুর রহমান মীর ৬০ হাজার ৯৯৩ টাকা ও হানজালা হান ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৯ টাকা পাবেন কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে।
নোটিসদাতাদের অভিযোগ, দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে অর্ধশত সাংবাদিককে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা হয়। এ ছাড়া অনেকে বিভিন্ন সময় অব্যাহতি নিয়েছেন। এমন প্রায় ৫০ জন কর্মীকে সার্ভিস বেনিফিটের (গ্রাচুয়িটিসহ) টাকা দেয়া হচ্ছে না। দেব, দিচ্ছি, তহবিল নেই বলে ঘোরানো হচ্ছে।
এ নিয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশক, বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ফল পাওয়া যায়নি বলেও তাদের অভিযোগ।
অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামতো হিসাব করে প্রত্যেকের পাওনা দশ ভাগে বিভক্ত করে ২০২৪ সালে তিন থেকে দশটি পর্যন্ত চেক দেয়। চেকগুলো ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য প্রতি মাসের বিভিন্ন তারিখ ২৫, ২৮ ও ২৯ উল্লেখ করে দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকে চেক জমা দিলে ওই একাউন্টে টাকা না থাকায় জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্টে চেক ডিসঅনার হয়।
তারা অভিযোগ করেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে গিয়ে কোনো সমাধান মেলেনি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে গেলে চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেননি।
তারা বলেন, এরপর কয়েকজন সাংবাদিক নিম্ন আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০ সাংবাদিকের পাওনা পরিশোধ করে। বাকিদের আশ্বস্ত করে, দ্রুত টাকা পরিশোধ করা হবে। এরই মধ্যে সবার চেকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে কালের কণ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিকের কাছ থেকে চেক নিয়েছে। এরপর সেই চেকগুলো ফেরত দেয়া হয়নি, মেয়াদও বাড়ানো হয়নি।
নোটিসদাতাদের একজন হানজালা হান বলেন, তারা ছাড়া কয়েকজন সাংবাদিক নিম্ন আদালতে মামলা করেছেন। দুজনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর মধ্যে কাজী মো. মোতাহার হোসেন বনাম সায়েম সোবহান আনভীর মামলায় ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে হানজালার অভিযোগ।
সাত দিনের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নিলে টাকা আদায়ের জন্য তারা হাই কোর্টে রিট আবেদন করবেন বলে নোটিসে জানানো হয়।