সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী বলেছেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাহমিদুর রহমান।
আজ রবিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। পরে মহালয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে মহালয়া উপলক্ষে শতাধিক যাত্রী বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় ৭২ জনের মৃত্যু হয়। আজ নৌকাডুবির তিন বছরপূর্তি ও বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৬-৭ জন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে যান।
এ সময় করতোয়া নদীর ঘাটে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাহমিদুর রহমান সাংবাদিকদের নদী পার হতে বাধা দেন। সেই সময়ে নদীতে তিন থেকে চারটি নৌকা চলাচল করছিল এবং নৌকায় মোটরসাইকেলও পারাপার হচ্ছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা নৌকায় উঠতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলেন, মোটরসাইকেল নেওয়া যাবে না।
ওই সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন অন্যরা মোটরসাইকেল পার হচ্ছে, আমরা কেন নিউজের কাজে যেতে পারব না?’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আল-জাজিরা, বিবিসি বাংলা আর আর্ন্তজাতিক সাংবাদিক হন, আর যেই সাংবাদিক হন—তাতে আমার যায় আসে না। যেতে পারবেন না।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য ক্যামরায় রেকর্ড করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সন্ত্রাসী।’
শতাধিক লোকের সামনে সাংবাদিকদের এভাবে অপমান করার ঘটনায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি নূর হাসান বলেন, ‘আমরা মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করেন। ঘাটে একবারে ফাঁকা ছিল এবং অন্য ব্যক্তিদেরও যেতে দেখা যায় মোটরসাইকেল নিয়ে নৌকা পারাপার হতে। ইউএনও নিজেও নৌকায় করে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাট পারাপার হচ্ছিলেন। তাহলে সাংবাদিকদের যেতে বাধা কেন?’
বাংলাভিশন টেলিভিশনের সাংবাদিক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের সাংবাদিক পরিচয় শুনে রেগে গিয়ে বলেন, “আল-জাজিরা সাংবাদিক হন যে সাংবাদিক হন, যেতে পারবেন না।” অন্যরা যেতে পারলে আমরা কেন যেতে পারব না—এ কথা বললে, তিনি আমাদের বলেন, “আপনারা তো সন্ত্রাসী।” একাধিক সাংবাদিককে এভাবে সন্ত্রাসী বলে তিনি গালিগালাজ করতে পারেন না।’
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সাংবাদিকরা তাকে বিষয়টি জানান। তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবেত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে আউলিয়ার ঘাটের সার্বিক কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সূত্র: আমাদের সময়