গফরগাঁও (ময়মনসিংহ): রাজনীতি মানেই শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, সত্যিকার অর্থে এটি ত্যাগ, সাহস এবং আদর্শের সংগ্রাম। নিগুয়ারি ইউনিয়নের জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক পরীক্ষিত নেতা ফরিদ খান তার দীর্ঘ ১৭ বছরের এই ত্যাগ ও সংগ্রামের নিরব সাক্ষী।
ফরিদ খান কোনো দলবদলকারী রাজনীতিবিদ নন, তিনি ছিলেন না রাতারাতি আলোচনায় আসা হাইব্রিড নেতা। বরং তিনি নিজেকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নিগুয়ারি ইউনিয়নে বিএনপির যখন সুদিন ছিল না, নেতাকর্মীরা যখন মামলা-হামলার ভয়ে মাঠে নামতেন না, তখনও ফরিদ খান সাহসের সঙ্গে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহবায়ক আখতারুজ্জামান বাচ্চুর, অনুসারী হয়ে আন্দোলন, মিছিল-মিটিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৫টির অধিক মামলা, জেলজীবন—তবু পিছপা নন ফরিদ
২০০৭ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিএনপির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়কালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে অন্তত ১৫টিরও বেশি মামলা। কখনো জামিনে, কখনো কারাগারে—তবু দমে যাননি ফরিদ খান। সরকারি নিপীড়নের সময় যখন মাঠে হাতেগোনা কয়েকজন নেতা কর্মীই রাস্তায় নামতেন, তখন নিগুয়ারি ইউনিয়নে ফরিদ খান ছিলেন দৃশ্যমান উপস্থিত একজন। এ কারণেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে জেলও খাটতে হয়েছে।
৫ই আগস্টের পর ষড়যন্ত্র, তবু অবিচল ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পরে নিগুয়ারিতে বিএনপির রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মোড় নেয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ত্যাগ করা কিছু ‘হাইব্রিড’ ব্যক্তি বিএনপিতে যোগ দিয়ে পুরনো ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করার অপচেষ্টা শুরু করে। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতাহীন ও সুবিধাবাদী এ শ্রেণি নানা রকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফরিদ খানের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করার চেষ্টা চালায়।
কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র ও দলীয় অভ্যন্তরীণ চাপের মাঝেও ফরিদ খান বিচলিত হননি। মাঠ ছেড়ে যাননি। বরং দলের দুঃসময়ে সাধারণ কর্মীদের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আগের মতোই।
রাজপথে ফরিদ খান (বামে), পুলিশের ভ্যানে করে কারাগারে পাঠানোর ছবি (ডানে)
আদর্শিক রাজনীতির পথে অটল ফরিদ খান
ফরিদ খান বিশ্বাস করেন, বিএনপি একটি আদর্শিক দল। এই দল শুধু সরকারবিরোধী রাজনীতির বাহক নয়, এটি দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষার প্রতীক। আর এই বিশ্বাস থেকেই তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শে গড়ে তুলেছেন।
তার ভাষায়—”আমি নেতা হতে চাই না, কর্মী হয়েই থাকতে চাই। জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে আমি রাজনীতি করি, করেই যাব। আমার আত্মত্যাগ কোনো পদ বা পুরস্কারের জন্য নয়।”
সমাজ ও দলের কাছে প্রশ্ন বর্তমানে বিএনপির মতো বড় একটি দলের তৃণমূল পর্যায়ে এমন অনেক ত্যাগী নেতার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, যারা দল বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখেছেন। ফরিদ খান সেই উদাহরণ। তাকে বাদ দিয়ে রাজনীতির মাঠ সাজানো যেমন নেতাকর্মীদের মনে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তেমনি দলের নৈতিক ভিত্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ফরিদ খান নিছক একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা নন; তিনি জাতীয়তাবাদী দলের এক অদম্য কর্মী, ত্যাগ-তিতিক্ষার এক অনন্য প্রতীক। ষড়যন্ত্র, হামলা-মামলা কিংবা দলীয় উপেক্ষা—কিছুই তাকে রাজপথ থেকে সরাতে পারেনি। তার মতো নেতাদের সম্মান না দিলে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি যেমন বিপন্ন হবে, তেমনি তৃণমূলের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে। এখন সময় এসেছে—তাদের মূল্যায়নের, যাঁরা রাজনীতিকে শুধুই স্বার্থ নয়, বরং নীতির জায়গা থেকে দেখেন।